ইবাদত কী? কাকে বলে?

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ আপনারা সবাই কেমন আছেন আশা করি ভালো আছেন ..!!!
আমরা মুসলিম….তাই আমাদের আল্লাহর ইবাদত করা জরুরি……
আসুন জেনে নিই ইবাদাত সম্পর্কে….::——–
ইবাদত
➖➖➖
#অর্থ: বাধ্য হওয়া,অনুগত হওয়া ,লেগে থাকা,কারো সামনে এমনভাবে আত্নসমর্পন করা যেন তার মোকাবিলায়- কোনো প্রতিরোধ ;অবাধ্যতা;অকৃতজ্ঞতা না হয়।
#আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন আমাদের সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদতের জন্য। সাথে আবার “ইচ্ছা স্বাধীনতা” দিয়েছেন , পরীক্ষা করার জন্য। সব কর্মপদ্ধতি, সিলেবাস বলে দিয়েছেন। আখিরাতের অনন্ত শাস্তি ও অনন্ত পুরষ্কারের কথাও বলে দিয়েছেন । চয়েসটা শুধু আমাদের।
আমরা আমাদের নিয়ত ও কাজের মাধ্যমে কোনটা বেছে নিতে চাই?
#আমরা সবাই প্রতিদিন যা করি তাই “ইবাদত”। পার্থক্য হলো-কেউ আল্লাহর ইবাদত করে , কেউ তাগুতের ইবাদত করে। “আল্লাহ” ছাড়া অন্য যে কোন- ব্যক্তি/বস্তু/বিষয় ইত্যাদি যে কোনো কিছুর ইবাদত করা হলো “তাগুত”-এর ইবাদত করা।
#খাওয়া,বাথরুমে যাওয়া ,ঘুমাতে যাওয়া,নামাজ-কালাম সহ জীবনের প্রতি পদে ,প্রতিটি স্তরে একমাত্র এবং শুধুমাত্র আল্লাহর মনোনীত বিধান “ইসলাম”-এর সিস্টেম অনুযায়ী হলে সেটিই হবে “আল্লাহর ইবাদাত”।
#এই জীবনটা শুধুমাত্র পরীক্ষা কেন্দ্র/হল। আমরা সব্বাই পরীক্ষা দিচ্ছি! পরীক্ষার হলে এসে কি কি করা দরকার,খাতায় কি কি এনসার দেয়া দরকার তা আমরা যারা দুনিয়ার পরীক্ষা দিই ,তারা নিশ্চয়ই খুব ভালোকরে জানি!
#আমার মনে আছে- এস,এস,সি ও এইচ,এস,সি -এর রেজাল্টের দিনগুলোতে আমি কোরআন তিলাওয়াত করতেছিলাম আর কাঁদতেছিলাম এবং একটু পর পর রাস্তার দিকে তাকাচ্ছিলাম -রেজাল্ট নিয়ে আব্বা আসতেছেন কি-না! শুধু আমার নয় ,সকল পরীক্ষাদানকারী শিক্ষার্থীদেরই বিচিত্র টেনশন থাকে ফলাফলের দিন!
#দুনিয়ার পরীক্ষায় বারবার ফেল করে সিস্টেম অনুযায়ী পাশ করার চান্স থাকে! কিন্তু আল্লাহর নেয়া জীবনে আসল পরীক্ষা? এটা মানুষের জীবনে একবারই আসে! একবার ফেল করলে দ্বিতীয়বার চান্স পাবার কোনো সুযোগ নেই! এই পরীক্ষার শেষ টাইমও জানা নেই (মৃত্যু)!
#অনেক সময় কিছু মানুষ বলে থাকেন-“আমি মরলেই শান্তি পামু”! আসলে মৃত্যুর পর আমাদের A-Z আমল/কৃতকর্ম অনুযায়ী আমাদের সব্বার রিএকশন শুরু হয়ে যাবে। মৃত্যু মানে অনন্তহীন জীবনের শুরু! হাশরের ময়দানে মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন আমাদের সব্বার রেজাল্ট ঘোষনা করবেন!
#প্রতিটি যুগেই যে বা যারাই “আল্লাহর ইবাদাত”-কে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন এবং বর্তমানে চাচ্ছেন তারা বিভিন্নভাবে অত্যাচারিত-নির্যাতিত হয়েছেন এবং হচ্ছেন! এটাই চরম পরীক্ষা প্রতিটি সংগ্রামী মুমিনদের জন্য! কিন্তু মহা পুরষ্কার কার কাছে বলুনতো দেখি?! আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর ইবাদাতের পথে টিকে থাকার চরম ধৈর্য্য ও সৎ সাহস আমাদের দান করুন এবং তাগুতের যাবতীয় ইবাদাত পরিত্যাগ করার তাওফীক দান করুন । আমিন।
#####ইবাদত কবুলের পূর্ব শর্তঃ

হালাল রুটি-রুজি ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত। হালাল রুটি ও রুজি শুধু নিজের জন্য তা নয়, বরং পরিবারের সবার জন্য প্রযোজ্য। কারণ প্রতিটি খারাপ কর্মের প্রভাব শুধু নিজের ওপরই পড়ে না। তার প্রতিক্রিয়া পরিবার তথা সন্তান-সন্তুতির ওপরও পড়ে। সুতরাং নিজের হালাল উপার্জন দিয়ে জীবিকা অবলম্বন করার পাশাপাশি পরিবারকেও বিন্দু পরিমাণ হারাম ভক্ষণ থেকে হেফাজত করা কালেমায় বিশ্বাসী মুসলমানের ওপর ফরজ।

আল্লাহ বলেন,,- ﻭَﻻَ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﻭَﺗُﺪْﻟُﻮﺍْ ﺑِﻬَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺤُﻜَّﺎﻡِ ﻟِﺘَﺄْﻛُﻠُﻮﺍْ ﻓَﺮِﻳﻘًﺎ ﻣِّﻦْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻝِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﺎﻹِﺛْﻢِ ﻭَﺃَﻧﺘُﻢْ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ -অর্থাৎ `- তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্নসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কতৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না।` সূরা আল-বাক্বারাহ : আয়াত ১৮৮)

দেশে সুদ, ঘুষ, পরের সম্পদ আত্মসাৎ, খাদ্যে ভেজাল, চুরি-ছিনতাই ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্পদের নেশায় মানুষ পাগল হয়ে উঠছে। আমরা একটু ভাবছি না এর পরিণাম কত ভয়াবহ। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া ছেড়ে অবশ্যই আমাদের প্রস্থান করতে হবে। সম্পদ তখন আমাদের কোনো কাজেই আসবে না। এ বিষয়ে হাদিসে নববিতে অনেক সতর্কবাণী রয়েছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে দেহে হারাম খাদ্যে উৎপন্ন মাংস রয়েছে তা জান্নাতে যাবে না। নবী (সা.) আরও বলেছেন, হালাল জীবিকা সন্ধান করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ (তাবরানি ও বায়হাকি) ইবাদাত কবুলের জন্য হালাল খাদ্য অন্যতম শর্ত।

হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি দশ দিরহাম দিয়ে কোনো বস্ত্র ক্রয় করে এবং সেই দশ দিরহামের মধ্যে একটি দিরহামও হারাম হয় তবে যতক্ষণ সেই বস্ত্র তার পরিধানে থাকবে, ততক্ষণ তার নামাজ কবুল হবে না।

হজর যাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’ব ইবনে ওজরাকে বলেছেন, যে দেহের অস্থি-মজ্জা হারাম সম্পদ দ্বারা প্রতিপালিত হয়েছে তা কখনো বেহেশতে প্রবেশ করবে না এবং একমাত্র দোযখই হবে তার জন্যে সঠিক স্থান।
সুতরাং…
হালাল রুটি ও রুজি ইবাদত কবুলের পূর্বশর্তই নয়। হালাল রুজি নিজের ও পরিবারের জন্য ফরজ। আল্লাহ তাআলা হালাল জীবিকা অন্বেষণের তাওফিক দান করুন। হালাল আয়-রোজগার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য….
#চাইতে হবে সরাসরি আল্লাহর কাছে

“আমরা কেবল তোমারই ‘ইবাদাত করি এবং কেবলমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।” (০১.ফাতেহা -০৫)

“……আল্লাহ ছাড়া কোন বিধান দাতা নেই। তিনি আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া আর কারো ‘ইবাদাত করবে না, এটাই সঠিক দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না।” (১২.ইউসুফ – ৪০)

“সত্যিকার আহবান-প্রার্থনা তাঁরই প্রাপ্য, যারা তাঁকে ছাড়া অন্যকে ডাকে, তারা তাদেরকে কোনই জবাব দেয় না। তাঁরা হল ঐ লোকের মত, যে তার মুখে পানি পৌঁছবে ভেবে পানির দিকে হাত প্রসারিত করে দেয়, অথচ তার মুখে কক্ষনো পৌঁছাবে না। কাফিরদের আহবান নিস্ফল ব্যতীত নয়।” (১৩.রাদ – ১৪)

“আমি তোমার প্রতি এ কিতাব অবর্তীন করেছি সত্যতা সহকারে, (এতে নেই কোন প্রকার মিথ্যে) কাজেই আল্লাহর ‘ইবাদাত করে দ্বীনকে (অর্থাৎ আনুগত্য, হুকুম পালন, দাসত্ব ও গোলামীকে) একমাত্র তাঁরই জন্য নিদিষ্ট করে।” (৩৯.সূরা যুমার – ০২)

“বল- আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে আল্লাহর ‘ইবাদাত করতে তাঁর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে।” (৩৯.সূরা যুমার – ১১)

“বল- আমি ইবাদত করি আল্লাহর বিশুদ্ধভাবে তাঁর প্রতি আমার অনুগত্যের মাধ্যমে।”(৩৯.সূরা যুমার – ১৪)

“আল্লাহ কি তাঁর বান্দাহর জন্য যথেষ্ট নন? অথচ তোমাকে তারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদের ভয় দেখায়। আল্লাহ যাকে পথহারা করেন তার জন্য কেউ পথ দেখাবার নেই।
আর আল্লাহ যাকে পথ দেখান, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই। আল্লাহ কি মহাশক্তি ধর প্রতিশোধ গ্রহণকারী নন?
তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস কর- আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন কে? তারা অবশ্য অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। তোমরা কি চিন্তা করে দেখছ যে, আল্লাহ আমার ক্ষতি করতে চাইলে আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক, তারা কি সে ক্ষতি দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চাইলে, তারা কি তাঁর অনুগ্রহ ঠেকাতে পারবে? বল, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, নির্ভরকারীরা তাঁর উপরই নির্ভর করে।” (৩৯.যুমার: ৩৬ – ৩৮)
(তাফসীর ইবনে কাসীর এ সুরা যুমার ৩৮নং আয়াতের তাফসীরে আছে–“কিছু চাইতে হলে তাঁর কাছেই চাও এবং সাহায্য প্রার্থনা করতে হলে তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা কর। জেনে রেখো যে, আল্লাহর ইচ্ছা না হলে সারা দুনিয়া মিলে তোমার কোন ক্ষতি করতে চাইলে তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবেন। অনুরূপভাবে সবাই মিলে তোমার কোন উপকার করতে হইলেও)

“কাজেই আল্লাহকে ডাক আনুগত্যকে একমাত্র তাঁরই জন্য নিদিষ্ট করে, যদিও কাফিরগণ তা অপছন্দ করে”(৪০.সূরা মু’মিন – ১৪)

“তোমার প্রতিপালক বলেন- তোমরা আমাকে ডাকো, আমি (তোমাদের ডাকে) সাড়া দেব, যারা অহংকারবশতঃ আমার ‘ইবাদাত করে না নিশ্চিতই তারা লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (৪০.সূরা মু’মিন” – ৬০)

“চিরঞ্জীব তিনি, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাই নেই। কাজেই তাঁকে ডাক আনুগত্যকে একমাত্র তাঁরই জন্য বিশুদ্ধ করে। যাবতীয় প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য।”(৪০.মু’মিন – ৬৫)

“তাঁর নিদর্শনগুলোর মধ্যে হল রাত, দিন, সূর্য আর চন্দ্র। সূর্যকে সেজদা করো না, চন্দ্রকেও না। সেজদা কর আল্লাহকে যিনি ওগুলোকে সৃষ্টি করেছেন যদি সত্যিকার ভাবে একমাত্র তাঁরই তোমরা ইবাদাত করতে চাও।” (৪১.ফুসসিলাত – ৩৭)

“আমি জিন্ন ও মানবকে সৃষ্ট করেছি একমাত্র এ কারণে যে, তারা আমারই ‘ইবাদত করবে।”(৫১.আযযারিয়াত – ৫৬)

“তাদেরকে এ ছাড়া অন্য কোন হুকুমই দেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর ‘ইবাদত করবে খাঁটি মনে একনিষ্ঠ ভাবে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে। আর তারা নামায প্রতিষ্ঠা করবে আর যাকাত দিবে। আর এটাই সঠিক সুদৃঢ় দ্বীন।” (৯৮.বাইয়্যিনাহ – ০৫)

………………………..আমিন……………………

আজ এই পর্যন্ত
ধন্যবাদ সবাই কে …..সবাই সর্বদা ভাল থাকবেন
..  এর সাথেই থাকবেন….
……..

Leave a Comment